" আবার জন্ম নিও, তোমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পুর্ণ কোরো ". ওঁর শান্ত, সমাহিত মুখশ্রীর সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে এই কথাগুলো -ই বলেছিলাম কাল। আর কি-ই বা বলতে পারতাম ? আর কি-ই বা বলার ছিল ? একি অসম্পূর্ণতা ! একি অসময় ?
ওঁর মুখের ওই না-মেলানো হাসিটুকু কি বলতে চাইছিল ? বলতে চাইছিল কি - " আজ কেন ? " দীর্ঘ বছর ধরে তাঁর উপর ছুঁড়ে মারা প্রতিটি ব্যঙ্গের প্রত্যুত্তর কি ওই হাসি ? আজ অবশেষে তাঁর দর্শকেরা শুধুমাত্র 'পরিচালক ঋতুপর্ণ '-কে দেখতে এলো। দর্শকের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একবারও 'ব্যাক্তি ঋতুপর্ণ '-কে নিয়ে কোনো কৌতূহল প্রকাশিত হলো না ; কি উঠতি , কি প্রৌঢ় - কারোর মুখেই শুনলাম না কোনো ঠোঁট ব্যাকানো বক্রোক্তি। সবার মুখে শুধুই তাঁর কাজের কথা। অবশেষে ঋতুপর্ণ ঘোষ জনগণের কাছে শুধুমাত্র এক অনন্য পরিচালক , এক অতুলনীয় শিল্পী হিসেবে গৃহীত হলেন।আফশোস , আমাদের এই রুচিবোধ টুকু তাঁর জীবদ্দশায় আমরা দেখাতে পারলাম না। এই গ্রহণ যোগ্যতাটুকু একদিন আগেও অর্জন করতে পারি নি আমরা।
আমি নিজে কোনো গুণী শিল্পী নই। তাই তাঁর সান্নিধ্যে আসা প্রখ্যাত ব্যাক্তিদের মত তাঁকে বিচার করার , বিশ্লেষণ করার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি অগণিত দর্শক মাঝে কেবল এক দর্শক মাত্র , যাকে গভীরতা স্পর্শ করে। সেই গভীরেই ঋতুপর্ণ ঘোষ স্পর্শ করেছিল আমাকে। তাই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা ; না সমালোচনা বলব না , সমালোচনার মধ্যে একটা সুস্থতা থাকে ; বরং বলি , তাঁকে নিয়ে আমাদের তথাকথিত সমাজে অসুস্থ আলোচনা যখন তুঙ্গে , তখনও আমি তাঁর সোচ্চার ভক্ত ছিলাম।
বড় লাগলো বুকে। বড় বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর কাছে। বাংলা সিনেমাকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলেছিলেন তিনি। এমন সময় ' উনিশে এপ্রিল ' নিয়ে এলেন তিনি, যে সময় কেউ বাংলা সিনেমা দেখে , এ কথা জানা গেলে কলেজের , ছেলেমেয়েরা তাকে রীতিমত humiliate করত। তখন হিন্দী সিনেমার রমরমা বাজার। কলেজ কান্টিনের গানে একটাও বাংলা গান উঠে আসত না তখনকার উঠতি ছেলেমেয়েদের মুখে। আজ কিন্তু চিত্রটা একেবারে বদলে গেছে। আজ স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে আমি একজন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিকা। আজ যখন মেয়েদের নিয়ে পিকনিকে যাই, তখন স্কুল বাসে উচ্ব্ল ছাত্রীদের মুখে ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু বাংলা ছায়াছবির গান শুনি, আর শুনি রবীন্দ্রনাথ। সেই সব বাংলা ছবির গান নিয়েও বিশিষ্ট মহলে নানা তর্জমা শুনি। সবার মুখেই শুধু "গেল, গেল।" কেউ বোঝে না, " গেল " নয়, " এলো।" বাংলা আবার ফিরে এলো কিশোর -কিশোরী, তরুণ - তরুনীদের মধ্যে। আর এই ফিরে আসার দরজাটা খুলে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাঙালি আবার মাথা তুলে বলতে পেরেছিল , " হাঁ। আমি বাংলা সিনেমা দেখি। "
অতি তরল আর অতি গম্ভীর -এই দুই এর মাঝে এক স্বাভাবিক অথচ অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির ছবি আনলেন ঋতুপর্ণ। অতি চিন্তাশীল বিষয় নিয়ে কাজ করলেও , 'আঁতেল মার্কা ' , ' মাথার উপর দিয়ে যায় ' - এই ধরনের তকমা কিন্তু কেউ কখনো বসায় নি তাঁর ছবির আগে। তিনি একটা অন্য মাত্রার ছবি আনলেন। আমাদের মত দর্শকরা খানিকটা চোখের - মনের আরাম পেল। অন্যভাবে ভাবতে শেখালেন তিনি। দেখালেন, শুধু মাত্র প্রেমিক-প্রেমিকা , স্বামী-স্ত্রীর chemistry ছাড়াও আরো কত ধরনের chemistry আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে , যার কোনোটাকেই নিজের কাছে নিজে অস্বীকার করতে পারি না আমরা। কিন্তু স্বীকার করার সাহস দেখিয়েছিলেন ওই একটি ব্যাক্তি-ই। তারপর তো শুধুই অনুসরণ। পরেও যা হবে তাও অনুসরণ, অনুকরণ নয়। এককের অনুকরন হয় না। অনুকরন করে কেউ ঋত্তিক ঘটক হন নি , ঋতুপর্ণ ঘোষ ও হবেন না। "এবং ঋতুপর্ণ " হতে পারে , " ঋতুপর্ণ এবং" হবে না।
আগামী দিনের পরিচালকরাও সারা জীবন ঋণী থাকবেন তাঁর কাছে। কারণ, নায়ক-নায়িকার glamour কে ছাপিয়ে সিনেমায় পরিচালকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তিনি। আমি বরাবর প্রসেনজিত এর fan ছিলাম। কিন্তু উনিশে এপ্রিল ,উৎসব নিয়ে যখন -ই আলোচনা করেছি, কখনো বলি নি " প্রসেনজিত এর উৎসব ", বলেছি " ঋতুপর্ণ ঘোষের উৎসব, ঋতুপর্ণ ঘোষের সব চরিত্র কাল্পনিক।"এখানেই তাঁর সার্থকতা , এখানেই তাঁর সম্পূর্ণতা। আর এখানেই ছবির প্রতি তাঁর আন্তরিকতা।
বড় দুঃখ পেলাম। ভালো সিনামা দেখার অপেক্ষাটা শেষ করে দিয়ে গেলেন তিনি। আবার কেউ কখনো এভাবে ছুঁতে পারবে কি মনকে ? জানি না। এখুনি আবার নতুন কোনো মুখের অপেক্ষা করতে মন প্রস্তুত নয়। পুরনো মুখটাই আবার জীবিত দেখতে চাই আমরা। ওই ভঙ্গিমা , ওই চাহনি- যা শুধুই বিতর্কের , শুধুই বিদ্রুপের ছিল এতদিন, সেই সব টুকু নিয়ে আবার তিনি ফিরে আসুন আমাদের মধ্যে। কারণ সেটাই তো তিনি , সবটাই তো তিনি। আজ সমাজ অবশেষে তাঁকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করেছে। তাঁর অঙ্গভঙ্গিমা নিয়ে , তাঁর হস্ত- সঞ্চালন নিয়ে যে ব্যাক্তি ঘৃনা করে এসেছে এতদিন , ঋতুপর্ণ -র শায়িত দেহের সামনে দাড়িয়ে সেই অতি নিন্দুক ও মনে মনে চেয়েছেন, আর একবার নড়ে উঠুক ওই হাতটা।
নিরুপমাকে " মরিয়া " প্রমাণ করতে হয়েছিল সে মরে নাই , আর ঋতুপর্ণকে " মরিয়া" প্রমাণ করতে হলো তিনি সমগ্রের, তিনি সামগ্রিক।
ওঁর মুখের ওই না-মেলানো হাসিটুকু কি বলতে চাইছিল ? বলতে চাইছিল কি - " আজ কেন ? " দীর্ঘ বছর ধরে তাঁর উপর ছুঁড়ে মারা প্রতিটি ব্যঙ্গের প্রত্যুত্তর কি ওই হাসি ? আজ অবশেষে তাঁর দর্শকেরা শুধুমাত্র 'পরিচালক ঋতুপর্ণ '-কে দেখতে এলো। দর্শকের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একবারও 'ব্যাক্তি ঋতুপর্ণ '-কে নিয়ে কোনো কৌতূহল প্রকাশিত হলো না ; কি উঠতি , কি প্রৌঢ় - কারোর মুখেই শুনলাম না কোনো ঠোঁট ব্যাকানো বক্রোক্তি। সবার মুখে শুধুই তাঁর কাজের কথা। অবশেষে ঋতুপর্ণ ঘোষ জনগণের কাছে শুধুমাত্র এক অনন্য পরিচালক , এক অতুলনীয় শিল্পী হিসেবে গৃহীত হলেন।আফশোস , আমাদের এই রুচিবোধ টুকু তাঁর জীবদ্দশায় আমরা দেখাতে পারলাম না। এই গ্রহণ যোগ্যতাটুকু একদিন আগেও অর্জন করতে পারি নি আমরা।
আমি নিজে কোনো গুণী শিল্পী নই। তাই তাঁর সান্নিধ্যে আসা প্রখ্যাত ব্যাক্তিদের মত তাঁকে বিচার করার , বিশ্লেষণ করার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি অগণিত দর্শক মাঝে কেবল এক দর্শক মাত্র , যাকে গভীরতা স্পর্শ করে। সেই গভীরেই ঋতুপর্ণ ঘোষ স্পর্শ করেছিল আমাকে। তাই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা ; না সমালোচনা বলব না , সমালোচনার মধ্যে একটা সুস্থতা থাকে ; বরং বলি , তাঁকে নিয়ে আমাদের তথাকথিত সমাজে অসুস্থ আলোচনা যখন তুঙ্গে , তখনও আমি তাঁর সোচ্চার ভক্ত ছিলাম।
বড় লাগলো বুকে। বড় বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর কাছে। বাংলা সিনেমাকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলেছিলেন তিনি। এমন সময় ' উনিশে এপ্রিল ' নিয়ে এলেন তিনি, যে সময় কেউ বাংলা সিনেমা দেখে , এ কথা জানা গেলে কলেজের , ছেলেমেয়েরা তাকে রীতিমত humiliate করত। তখন হিন্দী সিনেমার রমরমা বাজার। কলেজ কান্টিনের গানে একটাও বাংলা গান উঠে আসত না তখনকার উঠতি ছেলেমেয়েদের মুখে। আজ কিন্তু চিত্রটা একেবারে বদলে গেছে। আজ স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে আমি একজন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিকা। আজ যখন মেয়েদের নিয়ে পিকনিকে যাই, তখন স্কুল বাসে উচ্ব্ল ছাত্রীদের মুখে ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু বাংলা ছায়াছবির গান শুনি, আর শুনি রবীন্দ্রনাথ। সেই সব বাংলা ছবির গান নিয়েও বিশিষ্ট মহলে নানা তর্জমা শুনি। সবার মুখেই শুধু "গেল, গেল।" কেউ বোঝে না, " গেল " নয়, " এলো।" বাংলা আবার ফিরে এলো কিশোর -কিশোরী, তরুণ - তরুনীদের মধ্যে। আর এই ফিরে আসার দরজাটা খুলে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাঙালি আবার মাথা তুলে বলতে পেরেছিল , " হাঁ। আমি বাংলা সিনেমা দেখি। "
অতি তরল আর অতি গম্ভীর -এই দুই এর মাঝে এক স্বাভাবিক অথচ অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির ছবি আনলেন ঋতুপর্ণ। অতি চিন্তাশীল বিষয় নিয়ে কাজ করলেও , 'আঁতেল মার্কা ' , ' মাথার উপর দিয়ে যায় ' - এই ধরনের তকমা কিন্তু কেউ কখনো বসায় নি তাঁর ছবির আগে। তিনি একটা অন্য মাত্রার ছবি আনলেন। আমাদের মত দর্শকরা খানিকটা চোখের - মনের আরাম পেল। অন্যভাবে ভাবতে শেখালেন তিনি। দেখালেন, শুধু মাত্র প্রেমিক-প্রেমিকা , স্বামী-স্ত্রীর chemistry ছাড়াও আরো কত ধরনের chemistry আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে , যার কোনোটাকেই নিজের কাছে নিজে অস্বীকার করতে পারি না আমরা। কিন্তু স্বীকার করার সাহস দেখিয়েছিলেন ওই একটি ব্যাক্তি-ই। তারপর তো শুধুই অনুসরণ। পরেও যা হবে তাও অনুসরণ, অনুকরণ নয়। এককের অনুকরন হয় না। অনুকরন করে কেউ ঋত্তিক ঘটক হন নি , ঋতুপর্ণ ঘোষ ও হবেন না। "এবং ঋতুপর্ণ " হতে পারে , " ঋতুপর্ণ এবং" হবে না।
আগামী দিনের পরিচালকরাও সারা জীবন ঋণী থাকবেন তাঁর কাছে। কারণ, নায়ক-নায়িকার glamour কে ছাপিয়ে সিনেমায় পরিচালকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তিনি। আমি বরাবর প্রসেনজিত এর fan ছিলাম। কিন্তু উনিশে এপ্রিল ,উৎসব নিয়ে যখন -ই আলোচনা করেছি, কখনো বলি নি " প্রসেনজিত এর উৎসব ", বলেছি " ঋতুপর্ণ ঘোষের উৎসব, ঋতুপর্ণ ঘোষের সব চরিত্র কাল্পনিক।"এখানেই তাঁর সার্থকতা , এখানেই তাঁর সম্পূর্ণতা। আর এখানেই ছবির প্রতি তাঁর আন্তরিকতা।
বড় দুঃখ পেলাম। ভালো সিনামা দেখার অপেক্ষাটা শেষ করে দিয়ে গেলেন তিনি। আবার কেউ কখনো এভাবে ছুঁতে পারবে কি মনকে ? জানি না। এখুনি আবার নতুন কোনো মুখের অপেক্ষা করতে মন প্রস্তুত নয়। পুরনো মুখটাই আবার জীবিত দেখতে চাই আমরা। ওই ভঙ্গিমা , ওই চাহনি- যা শুধুই বিতর্কের , শুধুই বিদ্রুপের ছিল এতদিন, সেই সব টুকু নিয়ে আবার তিনি ফিরে আসুন আমাদের মধ্যে। কারণ সেটাই তো তিনি , সবটাই তো তিনি। আজ সমাজ অবশেষে তাঁকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করেছে। তাঁর অঙ্গভঙ্গিমা নিয়ে , তাঁর হস্ত- সঞ্চালন নিয়ে যে ব্যাক্তি ঘৃনা করে এসেছে এতদিন , ঋতুপর্ণ -র শায়িত দেহের সামনে দাড়িয়ে সেই অতি নিন্দুক ও মনে মনে চেয়েছেন, আর একবার নড়ে উঠুক ওই হাতটা।
নিরুপমাকে " মরিয়া " প্রমাণ করতে হয়েছিল সে মরে নাই , আর ঋতুপর্ণকে " মরিয়া" প্রমাণ করতে হলো তিনি সমগ্রের, তিনি সামগ্রিক।
Age ei manus tir porichalito cinema dekhar sebhabhe soubhagyo hoy ni.. ekhon dekhchhi.. ebong khub valo o lagchhe.. kintu akhyep ektai uni ekhon nei
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete