"মা !" আচম্বিক যেন এক সহসা ডাকে
ঘুম ভাঙ্গলো কুন্তীর। ধড়মড়িয়ে উঠে সে
দেখল চেয়ে চারিদিক। কে ডাকে তাকে ?
যুধিষ্ঠির ? না তো ! সে না। প্রশান্ত মুখশ্রী ,
বিভোর ঘুমে নাবালক জ্যেষ্ঠ পুত্র তার -
ঊর্ধমুখ , ঋজুদেহ , বুকেতে দু'হাত ;
যেন নিশ্চল ধ্যানে , পাহাড় - প্রতিম , স্থির ,
অবিচল। গভীর নিদ্রার চেয়েও গভীর
সে মুখ। যেন পরম সত্য , একমাত্র।
তবে কি ভীম ? সদা ক্ষুদার্ত পুত্র তার ?
আহা রে বাছা ! ক্ষুধা কি পেয়েছে তোর্ ?
ত্রস্ত -ব্যস্ত মাতা ভীমের কাছেতে যায়
তড়িঘড়ি। না গেলেও হয়। পুত্র তার
বিপুলকায় ; জগত জানে সে ঘুমোলে ;
নাসিকায় তার বহু মহারথী একত্রে
বাস করে। ঘোর প্রলয় লাগে রাত্রিকালীন
ক্রোধোন্মত্ত গর্জনে আছড়ে ভাঙ্গে ঢেউ।
উত্থানে - পতনে হুঙ্কারে নিদ্রিত
তবু উদ্ধত , বলশালী ভীম।
সমরক্ষেত্র ছেড়ে , জননী চায় বাঁয়ে ,
অর্জুনের পায়ে। যেন নিপূণ কারিগর
অতীব যতনে করেছে রচনা
সুলোচন ,গৌরবর্ণ , দীর্ঘকায়
মেধাসিক্ত এ তনুবর। হস্ত-পদতল
যেন গোলাপ-জল আঁকা। এ বালক যবে
পুরুষ-প্রবর হবে ; কত যে নারীমন
বিদ্ধ হবে নয়নবাণে। অর্জুন সুপ্ত।
তবে , ডাকে কে তারে ? কোন শিশুকন্ঠ
বারংবার বাজে জননীর কানে !
নকুল আর সহদেব - অভিন্ন সহোদর
পাশাপাশি শোয় - মিলি দুয়ে একসাথে -
গলা জড়াজড়ি ; আকুল আশ্রয় করি
একে -অপরে। একাঙ্গ যেন তারা।
সুনিপূণ , অনুগত। জ্যেষ্ঠ সমীপে
সদা আনত। ঘুমন্ত তাদের ওই
শিশুমুখ হেরি মাতৃবক্ষ জুড়ায়।
তবে কে ডাকে ! পঞ্চপান্ডব নির্লিপ্ত ,
নির্বাক। তথাপি এ কোন আর্তডাক
খোঁজে তার জননীরে ? নিশীথ নিঃসীম ,
নিশ্ছিদ্র আঁধার। নির্জন এ নীরবতায়
নিঃশ্বাসও বুঝি রুদ্ধ , শব্দ না ফেলে।
ঘনঘোর নিশা , বনভূমি প্রেতকায়।
অশরীরী মন্দ্র বায়ু নিশ্চুপ বয়।
এমত কঠিন রাতে , কোন এ শিশু ?
পথহারা , মাতৃহারা , কার এ রোদন ?
পাগলপ্রায় ?
ওই শোনো ! ওই শোনো ! আবার সে ডাক -
"মা ! মা ! " কোথা বালক ! কোথা সে গুপ্তস্থান ?
কোথায় লুকিয়ে কাঁদে অজানা এ স্বর ?
উন্মাদিনীর ন্যায় ব্যগ্র - ব্যকুল রাজমাতা
এদিক সেদিক চায়। অন্তর তার কেঁদে ওঠে
বারে বার । " যেই হোস তুই , আয় কাছে আয় । "
সহসা আপন অন্তর স্থলে ঝটিতি
কে যেন দিল নাড়া। বাহির না অন্তর ?
কোথা থেকে আসে ধ্বনি ! বুকের মধ্যে
বাজে কার প্রতিধ্বনি ! কান পেতে শোনে ,
রমণী। বাহিরে নয় গো বাহিরে নয়।
এ রোদন ভিতর হতে উথলে ওঠে।
গুমরিয়ে মরা বুকে - অন্তঃসলিলা
ফল্গু স্রোতের মত বহমান যে নদী -
আজ তারই জলস্ফীতি। দেখতে পেল মা।
ঘুমন্ত এক নিস্পাপ শিশুমুখ। অপরূপ
সৌন্দর্য তার। কোমল হাতের বন্ধ মুঠি ,
সদ্যজাত , নিদ্রিত।
এ মুখ তার রোজকার চেনা , প্রতিদিন ভাসে
চোখে। যেন যুগ যুগ ধরি অহরহ
দোঁহারে খোঁজে দোহে। বক্ষেতে যেন
প্রস্তররূপ জমাট স্তব্ধতা। হায় পোড়া মন !
তারও নীচে এক অশ্রু - জোয়ার সজোরে
দাবিয়ে রাখা। ঠেলে ঠেলে সে উগলে
ওঠে , বেরিয়ে আসতে চায়। কাঁদবে কোথা ?
ঢাকবে কোথা মুখ ? কোন কাঁধে রাখবে মাথা ?
নয় নয় নয়। যন্ত্রণা এ যে দেখাবার নয়।
জননী হেথায় শুয়ে একলা কাঁদে , সেই
একটি শিশুর লাগি। বক্ষ - মাঝে যে জন
থাকে ; তবু যাকে বক্ষে যায় না ধরা -
একবার , শুধু একবার তাকে ক্রোড় দিতে চায়
সন্তাপী মাতৃমন। পাবে না জেনেও
পেতে চায় তাকে - প্রতিদিন , প্রতিক্ষণ।
পঞ্চপুত্র মাতা তিনি। ধনে -মানে
নিপাট সাজানো পূর্ণ নারী। বিধাতা !
কিসের অভাব তার ? তবুও অভাব যেন
কোথাও কোনো বোধে। লুকিয়ে রাখা
কোনো সুপ্ত গভীর লোভে। বুভুক্ষু মা
ধারণ করতে চায় , অতি ক্ষুদ্র এক দেহ
সর্বসত্তায় আপন করতে চায় তাকে।
সকল পূর্ণতাতেও শূন্য কাঁদে মন।
পঞ্চপুত্র পরেও জননী কাঁদে -
একটি বার দেখার তরে , তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ,
প্রথম প্রসব। তার অনামী সন্তান।
Ashadharon!! Mon e chhoan tuku lege roilo jeno..lekha ta sesh howat bohukkhon por, na jani keno!!
ReplyDeletekeno .. ta shudhu amrai jani .. resh tukui chhuye thak .
Delete